আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। আর কয়েকদিন পরেই আমি প্রথম সন্তানের বাবা হতে যাচ্ছি। কিন্তু ওরা আমার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিয়েছে। আমি আমার একমাত্র সন্তানের মুখটাও দেখতি পারব না। আমি ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। সংবাদ সম্মেলনে এমনিভাবেই কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডস্থ পলাশপুরের মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা মৃত সেকান্দার আলী খানের মেজ ছেলে সন্ত্রাসী হামলায় দৃষ্টিশক্তি হারানো যুবক সোহাগ খান।
গত ৪ ডিসেম্বর সকালে নগরীর হাটখোলার কসাইখানা এলাকায় বিশ্বাসের হোটেলের সামনে জমি বিরোধের জের ধরে হাটখোলা হকার্স মার্কেট এলাকার রাজমিস্ত্রি মোবারক আলী’র চার সন্তান সোহাগের ওপর হামলা এবং মোটরসাইকেলের চাবি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে সোহাগের চোখ নষ্ট করে দেয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর আগরপুর রোডের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সোহাগের পরিবার। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দৃষ্টিশক্তি হারানো সোহাগ খানের ছোট বোন মুক্তা আক্তার। লিখিত বক্তব্যে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মুক্তা বলেন, ‘জমি জমা নিয়ে হাটখোলা হকার্স মাকের্ট এলাকার রাজমিস্ত্রি মোবারক সিকদার ও তার চার ছেলের সাথে বিরোধ চলে আসছিল সোহাগ এবং তাদের পরিবারের। এ নিয়ে প্রায় সময় সোহাগ ও তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল প্রতিপক্ষরা।
ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ৪ ডিসেম্বর সোহাগ খান কসাইখানা এলাকায় বিশ্বাসের হোটেলে নাস্তা করছিলেন। সেখানে মোবারকের ছেলেদের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে তিন সহোদর আল আমিন, সাইফুল ও রাব্বি মিলে সোহাগের ওপর হামলা করেন। এক পর্যায় সোহাগকে হাত-পা চেপে ধরে মোটরসাইকেলের চাবি দিয়ে সোহাগের চোখে এলোপাতাড়ি আঘাত করে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘হামলা করে চোখ নষ্টের পরেও ক্ষান্ত হয়নি প্রতিপক্ষরা। বরং হামলা করে উল্টো পুলিশ খবর দিয়ে সোহাগকে তাদের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করে। তবে স্থানীয়দের তোপের মুখে ব্যর্থ হয় পুলিশ। বরং স্থানীয়দের রোষানল থেকে রক্ষা পেতে হামলাকারী নাজমুল ও রাব্বিকে পুলিশ আটক করতে বাধ্য হয়। মুক্তা বলেন,‘হামলার ঘটনায় আমার বড় ভাই মাসুম খান বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আটককৃত নাজমুল ও রাব্বি ছাড়াও তাদের অপর দুই ভাই মো. আল আমিন ও সাইফুলকে আসামি করা হয়। মামলার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও অপর দুই আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বরং আটক হওয়া অপর দুই ভাই আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আমাদের মামলা তুলে নিতে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে হামলার শিকার যুবক সোহাগ খান বলেন, ‘আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। আর কয়েকদিন পরেই আমি প্রথম সন্তানের বাবা হতে যাচ্ছি। কিন্তু ওরা আমার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিয়েছে। আমি আমার একমাত্র সন্তানের মুখটাও দেখতে পারব না। আমি ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে আহত সোহাগের মা মাসুদা বেগম বলেন, ‘সোহাগ আমার সংসারের আয়ের উৎস। ওর বাবার মৃত্যুর পরে সংসার পরিচালনার পাশাপাশি একমাত্র বোনের লেখা পড়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়। সেই সন্তান আজ অন্ধ। ওরা আমার সোহাগের চোখের দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নিয়েছে। আমি ওদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। যাতে আর কোন মাকে এমন কষ্ট পেতে না হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সোহাগ খানের অস্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ইয়াসমীন, শ্বশুর বাবলু, বড় ভাই এবং মামলার বাদী মো. মাসুম খান। এছাড়াও সোহাগের এলাকার সাধারণ মানুষ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে ঘটনার প্রতিবাদ এবং দোষীদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা দু’জনকে গ্রেফতারও করেছি। বাকি দু’জনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আর বাদী ও তার পরিবারকে কেউ হুমকি দিয়ে থাকলে সে বিষয়ে অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply